২০১৬ সালের ৫ জুন মারা যান মিতু। চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পিবিআই তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, মামলার বাদীই হলেন আসামি। বাবুল আক্তারের নির্দেশে সন্ত্রাসীরা মিতুকে হত্যা করেছে এবং এই হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তার তিন লাখ টাকা খরচ করেছেন। এখন পিবিআই এ বিষয়ে আরও তদন্ত করছে এবং বাবুল আক্তার কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পিবিআই এর তদন্তে বেরিয়ে আসছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে যে, একটি পরকীয়া প্রেমের জন্য বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন। এই পরকীয়া প্রেমের যে নারী তার নাম গায়েত্রী অমর সিং। গায়েত্রী অমর সিং ভারতীয় নাগরিক। এখন তিনি নেদারল্যান্ডে অবস্থান করছেন।
পিবিআই প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছে যে, এই পরকীয়া নিয়েই বাবুল আক্তারের সঙ্গে তার স্ত্রীর ঝগড়া ঝাটি হয়েছিল এবং একপর্যায়ে বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। পিবিআই এর তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র গায়েত্রী অমর সিং নয়, একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বাবুল আক্তার এবং বাবুল আক্তারের শ্বশুর প্রয়াত মিতুর বাবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ করেছেন যে, একাধিক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল এবং এই সমস্ত সম্পর্ক নিয়েই তাদের মধ্যে পারিবারিক অশান্তি ছিল দীর্ঘদিন ধরে। শুধু তাই নয় মিতুর পিতা অভিযোগ করেছেন যে, মিতু স্বামীর থেকে আলাদা হতে চেয়েছিলেন এবং সন্তানদের নিয়ে তিনি বাবার বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন। মিতুর পিতা অভিযোগ করেছেন যে, সরকারি চাকরি পাওয়ার পর থেকেই বাবুল আক্তারের পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং তিনি একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এই নিয়ে একাধিকবার তাদের মধ্যে পারিবারিক সালিশ বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বাবুল আক্তারকে কিছুতেই শুধরানো যায়নি। পিবিআই এর তদন্তে এরকম অন্তত ৫ জন নারীকে পাওয়া গেছে, যাদের সাথে বাবুল আক্তারের অনৈতিক এবং অবৈধ সম্পর্ক ছিল এবং এটি পুলিশ বিভাগের অনেক কর্মকর্তারাও জানতেন। পুলিশ বিভাগের কেউ কেউ বাবুল আক্তারকে প্লেবয় হিসেবে গণ্য করতেন। বাবুল আক্তার একজন চৌকস অফিসার ছিলেন। তিনি জাতিসংঘের শান্তি মিশনেও অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু নারীঘটিত ব্যাপারে তার অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। সহজেই তিনি নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন এবং প্রেমে পড়তেন।
জানা গেছে যে, মিতুর প্রথম সন্তানের সময় বাবুল আক্তার একজন নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই নারীর সম্পর্কের বিষয়টি মিতু জানাজানি হওয়ার পর পারিবারিক অশান্তি তৈরি হয়। সে সময় বাবুল আক্তার অভিনয় করে স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চান। এর দুই বছর পর আবার আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের তথ্য প্রমাণও পাচ্ছে পিবিআই। সেই সময়ও বিষয়টি মিতু জেনে ফেলে এবং তারপর তারা দুজন পরিবারিকভাবে ডিভোর্স নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু শেষে আবার বাবুল আক্তারের নাটক শুরু হয় এবং ভবিষ্যতে আর এ ধরনের তৎপরতা করা হবে না ইত্যাদি বলে বাবুল আক্তার ডিভোর্স এড়াতে সক্ষম হন। এরপর বাবুল আক্তারের সঙ্গে আরও দু`জন নারীর সম্পর্কের কথা পাওয়া গেছে। শুধুমাত্র মিতুর পরিবার নয়, পুলিশে তার ঘনিষ্ঠরা জানতেন যে, বাবুল আক্তার পরকীয়ায় আসক্ত এবং সহজেই তিনি নারীদের পাটাতে পারতেন। তাকে পুলিশে তার বন্ধুবান্ধবরা প্লেবয় হিসেবে ডাকতো।